জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে আনীত প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে জাতীয় সংসদে আজ পাশ হয়েছে।

জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত
জাতিকে পদ্মা সেতু উপহারঃ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় প্রস্তাবটি আজ সংসদে উত্থাপন করেন।প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন।

আনীত প্রস্তাবে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব, মানুষের প্রতি অপার ভালোবাসা এবং জাতিকে পদ্মাসেতু উপহার দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হোক।”

তিনি বলেন, আগামী ২৫ জুন, ২০২২ মাননীয় প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু কাঙ্খিত সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প ‘পদ্মাসেতু’ উদ্বোধন করবেন।

এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার তিন কোটির অধিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মাসেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

চার লেনের হাইওয়ে এবং এক লেনের রেললাইন সম্বলিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আজ পরম বাস্তবতা। বাঙালির অহংকার, আত্মপ্রত্যয়, সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। এই অর্জন ও কৃতিত্বের দাবীদার একমাত্র প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চিফ হুইপ বলেন, শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বিশ্ব ব্যাংকের ১০০ ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মাসেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা ছিলেন তাঁর পিতার মত আপোষহীন, অটল ও অবিচল। কোনো চাপের কাছে শেখ হাসিনা সেদিন মাথা নত করেননি।

জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

২০১২ সালের ৮ জুলাই এই মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নেই হবে।

বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু নির্মিত হয়েছে। সে সময়ে কিছু অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

পদ্মাসেতুর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজকে প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। পদ্মাসেতুর সড়ক ও রেল সংযোগের কারণে প্রথমবারের মত সমগ্র দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোর আওতায় চলে আসবে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় সামগ্রিকভাবে দেশের জিডিপি বাড়বে প্রতি বছর অন্তত ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

বিগত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে পদ্মাসেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চালিত হবে এবং এর ফলে দক্ষিণাঞ্চল আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি। সকল প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের অতুলনীয় নিদর্শন।

পদ্মাসেতু নির্মাণ বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আজ এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের চোর অপবাদ দিয়ে পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যায়।

সেদিন বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান-মন্ত্রী বলেছিলেন- ‘নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মাসেতু করবো’। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে প্রধান-মন্ত্রী সেই অপবাদকে মিথ্যা প্রমান করে, সেদিনের সেই অপমান আর অপবাদের প্রতিশোধ নিয়েছেন।

সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন।

পদ্মাসেতু নিয়ে দেশী-বিদেশী যে চক্রান্ত এটা শুধু এ দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে ধ্বংস করাই নয়, এটা ছিল একটি রাজনৈতিক সরকারকে অপদস্ত করে ক্ষমতা থেকে বিদায় ঘটানোই ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

তাদের সকল চক্রান্তকে উপেক্ষা করে প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এই সেতু নির্মাণ করে সকল ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।

সরকারি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। তাঁর দুই কন্যা আমাদের মাঝে আছেন। আমরা তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্য শেখ হাসিনার হাতে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলাম।

তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা। তিনি চোখের সামনে দেশের ভবিষ্যত দেখেন। ২০০১ সালে তিনি পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

আগামী ২৫ জুন তিনি সেই সেতু উদ্বোধন করবেন। পদ্মাসেতু চালু হলে দাক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ এই সেতু হওয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত।

সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, শত হুমকি ধামকি আর ষড়যন্ত্র প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবেন।

বঙ্গবন্ধুর মতো কারো কাছে মাথা নত না করার নীতিতে অবিচল প্রধান-মন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই এতবড় স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেমন এদেশকে ভালবাসতের তিনিও এ দেশকে দেশের মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসেন।

সরকারি দলের সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে একটি ভাল কাজ করেছে, এমন একটা উদাহরণ তারা দিতে পারবে না।

কারণ ক্ষমতায় থাকা মানেই তাদের কাছে লুটপাট করে পকেট ভারী করা। অন্যের কৃতিত্ব ছিনতাই করা বিএনপির আজীবনের স্বভাব। নিজেরা কিছু করে না, করার সক্ষমতা নেই, কিন্তু অন্যের কৃতিত্ব চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করাই এদের স্বভাব।

জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

জাসদের হাসানুল হক ইনু বলেন, কারিগরি, প্রযুক্তিগত দিক থেকে পদ্মাসেতু বিশ্বের বিষ্ময়। পদ্মাসেতু বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, অনন্য মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিয়েছে।

দেশের প্রতিটি মানুষ আজ পদ্মাসেতুর জন্য গর্ব ও অহংকার বোধ করছে। এই সেতুর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা যুগ-যুগান্তরে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, বিশ্বব্যাংক মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মাসেতুর অর্থঅয়ন বন্ধ করে দিলেও পরবর্তীতে কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। প্রধান-মন্ত্রীকে দেয়া সংসদের এই ধন্যবাদ প্রদান করায় তিনিই শুধু সম্মানিত হবেন না, সমগ্র জাতি সম্মানিত হবেন।

প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা,

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সরকারি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ফারুক খান, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, শাজাহান খান, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আব্দুস সোবহান মিয়া, মৃনাল কান্তি দাস, আ ফ ম রুহুল হক, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, আ স ম ফিরোজ,

সাগুফতা ইয়াসমিন, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, কাজী নাবিল আহমেদ, ইকবাল হোসেন অপু, শেখ তন্ময়, জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা,

ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, রওশন আরা মান্নান, বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী,

আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেন, পদ্মাসেতু নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।

জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেয়ায় সংসদে সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত

পদ্মাসেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু একটি আবেগ, ভালবাসা ও সক্ষমতার নাম। পদ্মাসেতু বিশ্বব্যাংকের অপমান চেষ্টার  উপযুক্ত জবাব। এই সেতু নির্মাণ ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি মহাচ্যালেঞ্জ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছা, অবিচল মনোবল ও নেতৃত্বের দৃঢ়তায় সকল ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, অপবাদকে উপেক্ষা করে পদ্মাসেতু নির্মাণ হয়েছে। আগামী ২৫ জুন এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।

আরও দেখুনঃ

ছয় দফা ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় পুনর্বিন্যাস : বিশ্লেষকদের অভিমত

সংসদ নেতা (বাংলাদেশ)