করোনার ধকল কাটিয়ে অর্থনীতিতে গতি ফিরছে। প্রধান সূচকগুলোওতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় এবং রফতানি আয় দুটোই বাড়ছে। সেইসঙ্গে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ছে। যা দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা যায়, করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মহামারির ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।
এদিকে, ২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্যাসিফিক ডেনিমস লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আলোচিত বছরের জন্য সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (EPS) হয়েছে ২২ পয়সা। আগের বছর ইপিএস হয়েছিল ৪৯ পয়সা।
আগামী ১৫ ডিসেম্বর ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ নভেম্বর।
২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে কোম্পানিটি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের । এর মধ্যে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ১ শতাংশ বোনাস।
আরো জানুন:
গুরুকুল লাইভ : করোনায় দেশে আবারো মৃত্যু এবং বাসাভাড়া বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই করোনার ধকল কাটিয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। গত চার মাস ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে এই ঋণ প্রবৃদ্ধি। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর অর্থ হলো, গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এই সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন। জুলাই ও আগস্টে এই সূচক ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩৮ ও ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
যদিও মুদ্রানীতিতে ঘোষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনও অনেক নিচে রয়ে গেছে এই সূচকটি। বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই মাসে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয় ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যের চেয়ে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ পয়েন্ট কম।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাকাররা বলেন, করোনার ধকল কাটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাংকিং খাতেও চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ঋণের চাহিদা বাড়ছে। সে কারণেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।
তাদের মতে, মহামারির সময় সরকারের প্রণোদনার ঋণ ছাড়া ব্যাংকগুলো অন্য কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমদানি-রফতানি বাড়ছে, অর্থনীতিতে গতি ফিরে এসেছে। উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগ করছেন। সে কারণেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
এদিকে, করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা নিয়ে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য যথা সময়ে শুরু করা যায়, সেজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহামারি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত এক লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং কটেজ মাইক্রো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (সিএমএসএমই) ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল অন্যতম। এই দুই তহবিলের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা (১৫ হাজার ও ১০ হাজার কোটি টাকা) জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে আরো জানুন:
উইকিপিডিয়া : বাংলাদেশের অর্থনীতি
আমাদের সাথে যোগাযোগ