কলায় আছে যত পুষ্টিগুন এবং কোনটি সবথেকে স্বাস্থ্যকর কলা?

আমাদের দেশে মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ফলগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কলা। সুস্বাদু আর পুষ্টিকর এ ফলটির রয়েছে অনেক গুণ। এ ফলটির জনপ্রিয়তা পেয়েছে পুরো বিশ্বব্যাপী।

কলায় আছে যত পুষ্টিগুন

কলাতে থাকা ক্যালরি ও চিনির বিষয়ে অনেকেরই ধারণা কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ) চিনি না খাওয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশিকা দিলেও সেটি কেবল অতিরিক্ত চিনি বা তার প্রক্রিয়াজাতকরন চিনির বিষয়ে বলেন। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে তাজা আর পুরো ফল হতে যে চিনি শরীরে যায় তা আমাদের কোন ক্ষতি করে না।
একটি মাঝারি আকৃতির ক-লায় প্রায় ১০০ ক্যালরি পর্যন্ত থাকে। এ ছাড়া ক-লার অনেক উপকারিতা রয়েছে। জানুন যে ৭ পুষ্টিগুণের কারণে খাবেন কলা—

১. পটাশিয়ামে পরিপূর্ণ

ক-লা পটাশিয়াম উপাদানের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। আর এই খনিজটি আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মূলত পটাশিয়াম হলো এক ধরনের ইলেকট্রোলাইট, যা নিয়মিত হৃদস্পন্দন, স্নায়ুকে কাজ করতে এবং পেশিগুলোকে সংকোচন করতে সহায়তা করে। এটি পুষ্টিকে কোষে স্থানান্তর করতে এবং কোষের বাইরের বর্জ্য স্থানান্তর করতে সহায়তা করে।
এ ছাড়া ক-লার পুষ্টিগুণ একটি প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক এর মতো কাজ করে, অতিরিক্ত পরিমানে সোডিয়াম আর তরল শরীর থেকে বের করে দেয় আর শরীরের মধ্যে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে থাকে।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ

banana copyright free image form pixabay.com-4493420_1920

ক-লা পলিফেনিলিক নামে এক ধরনের পদার্থে সমৃদ্ধ; যেটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট প্রদাহ এবং কোষের ক্ষতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, ধমনী শক্ত হওয়া, বয়স-সংক্রান্ত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, নির্দিষ্ট এক ধরনের ক্যান্সার আর অ্যালজেইমারস এর মত রোগের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে।
এ ছাড়া ক-লার মধ্যে থাকা বিভিন্ন যৌগগুলো জেনেটিক ভাবে ক্ষতি বা ডিএনএ আপস, রোগের ঝুঁকি কমায় আর স্নায়বিক কার্যকারিতার জন্য উন্নত করতে সহায়তা করে।

৩. অন্যান্য পুষ্টিগুণ

কলাতে থাকা প্রতিরোধী স্টার্চ আমাদের শরীরে একটি অনন্য ধরনের কার্বোহাইড্রেট সরবরাহ করে থাকে। আর জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রির তথ্যমতে, ক-লাতে পাওয়া আরেকটি প্রাকৃতিক পদার্থ ফ্রুক্টুলিগোস্যাকারাইডস প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এর কারণে ক-লা শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং ভালো প্রোবায়োটিক সরবরাহ করে, যা হজমের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
৪. শক্তি সরবরাহ করে
ক-লা আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে অনেক কার্যকরী। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মলিকিউলার সায়েন্সের তথ্যমতে, ক-লা টেকসই শক্তির জন্য অন্যতম সেরা খাবার। কারণ ক-লার মধ্যে থাকা ফাইবার আর ভিটামিন বি-৬ রক্তের শর্করা এর মাত্রা পরিমাণ আর ইনস্যুলিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়তা করে থাকে।
ক্যালরির চাহিদা মেটাতে সবচেয়ে সহজলভ্য ফল ক-লা। ফলটিতে থাকা ক্যালরির পরিমাণ ১০০। এছাড়াও এতে রয়েছে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

কোনটি সবথেকে স্বাস্থ্যকর কলা?

 

বাজারে আমরা খুব সহজেই পেয়ে যাই নানা ধরনের ক-লা। পাকার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে জায় ক-লার রং।
যেমন: সবুজ রং এর ক-লা, হলুদ রং এর, হালকা পরিমানে দাগযুক্ত ক-লা। ফলে আমরা অনেক সময় ভেবে থাকি, কোনটি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ক-লা।

ক-লার বিভিন্ন রং এর সকল পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

কলা পেকে গেলে তার রঙের মধ্যে পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক ক-লার মধ্যেই বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণ রয়েছে। কিন্তু এ নিয়েই আমরা সব থেকে বেশি দ্বিধার মধ্যে পড়ি।

সবুজ রংয়ের কলা:

কলায় আছে যত পুষ্টিগুন
সবুজ রংয়ের কলা

ক-লার রং যদি সবুজ থাকলে এটি হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর মধ্যে সবথেকে অন্যতম। যারা খাবারের মধ্যে চিনি কম খান তাদের জন্য সবুজ রঙের ক-লা সব থেকে উৎকৃষ্ট।

সবুজ রঙের ক-লাকে আমরা কাচক-লা হিসাবে জানি। এর মধ্যে প্রো-বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা খাবার, হজম প্রক্রিয়ার জন্য খুবই ভালো কাজ করে।
হলুদ রংয়ের ক-লা
অনেকেই এ রঙের ক-লাকে সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করেন। এ ক-লা খেতে মিষ্টি ও নরম। সবুজ ক-লার থেকে হলুদ রংয়ের ক-লায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। পাকার সঙ্গে সঙ্গে ক-লার অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও বেড়ে যায়।

তবে পুষ্টিবিদরা টাইপ-২ ডায়েবেটিকসের মধ্যে আক্রান্তদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকা এ ক-লা পরিহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
দাগযুক্ত ক-লা
যে সকল ক-লায় মধ্যে যত বেশি দাগ থাকে সে ক-লার ভিতর তত বেশি সুগার থাকে। দাগ থাকা বাদামি জায়গাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।

বাদামি রংয়ের কলা:

 

কলায় আছে যত পুষ্টিগুন
বাদামী রঙয়ের কলা

 

ক-লা খুব বেশি পেকে যাওয়ার পর যখন বাদামি রং ধারণ করে তখন আমরা অনেকেই এটি খাই না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো বাদামি রঙের এ ক-লাতেই সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এ ফলকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউসও বলা হয়।

এতে সুগার এর পরিমান থাকে অনেক বেশি। এ রঙের ক-লার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্তদের রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে।

 

 

কলা সস্পর্কে আরো জানতে :

উইকিপিডিয়া : কলা

আমাদের সাথে যোগাযোগ 

মন্তব্য করা বন্ধ রয়েছে।