নগদ এর মালিকানা নিলেও ঋণের দায় নিবে না ডাক বিভাগ

বাংলাদেশের মোবাইল ফোনেগুলোর অর্থ লেনদেন এর আলোচিত প্রতিষ্ঠান নগদ এর মালিকানা নিয়ে ডাকা বিভাগ কীভাবে তারা কোম্পানি গঠন করবে – মঙ্গলবার সরকার এর আন্ত:মন্ত্রণালয় এর এক বৈঠকে সেই সকল নিয়মগুলো ঠিক করা হয়েছে।

নগদ এর মালিকানা নিলেও ঋণের দায় নিবে না ডাক বিভাগ

তবে কর্মকর্তারা বলে দিয়েছেন, নগদের বড় অংকের যে পরিমান ঋণ আছে, তার দায়ভার ডাক বিভাগ গ্রহন করবে না। এই ঋণগুলো সমন্বয় ঠিক করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগত কে ছয় মাসের সময় দিয়েছে।

নগদ এর পক্ষ হতে দাবি করা হয়েছে যে,

ঋণের বিষয়টি নিয়ে মালিকানার অংশ হতে ভাগাভাগি করে তাদের কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ধরনের জটিলতা নেই বলেছে।
ডাক বিভাগ এখন নগদ এর ৫১ শতাংশ এর মালিকানা নিয়ে একটি কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া চলিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ডাক আর টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ মঙ্গলবার আন্ত:মন্ত্রণালয় এর একটি বৈঠক হয়েছে।

ডাক অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন উল্লেখ করে বলেছেন যে,

তাদের এই একটি বৈঠকে কোম্পানির এর একটি কাঠামো ঠিক করা হয়েছে।
ডাক বিভাগ হতে একজন চেয়ারম্যান আর চারজন সদস্য আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নগদ এত চারজনের মত সদস্য নিয়ে তাদের পরিচালনা বোর্ড থাকবে।
এই বোর্ডের মধ্যে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হবেন ডাক আর টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এর সচিব। কোম্পানি গঠন এর থেকে ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে নগদের বড় অংকের পরিমানে ঋণ।

এই সময় মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন উল্লেখ করেছেন,

নগদ এর ঋণের কোন প্রকার দায়ভার ডাক বিভাগ গ্রহন করবে না। “কোম্পানি শুরু হওয়ার আগে তাদের সকল দায় আর সকল দায়িত্ব নিয়ে তো আমরা কোম্পানি থেকে করবো না,” এ কথা বলেছিলেন তিনি।
তিনি আরো জানিয়েছেন, “তারা (নগদ লিমিটেড) বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান এর হিসাবে যদি ঋণ নিয়ে থাকে, তবে সেটার জন্য তাদের দায় এবং দায়িত্ব হবে তাদের নিজেদের মধ্যে পরিশোধ করা।”

ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উল্লেখ্য করে তার বক্তব্যে বলেছেন,

নগদ এর মালিকানা নিলেও ঋণের দায় নিবে না ডাক বিভাগ
নগদের মালিকানা নিলেও ঋণের দায় নিবে না ডাক বিভাগ

“নগদ এর পক্ষ থেকে এরই মধ্যেই ১৭৩ কোটি টাকার মত পরিশোধ করা হয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। এখন বাকিটা তাদের শোধ করতে তাদের আরো সময় দেয়া হয়েছে।”
ডাক আর টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এর একটি সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকের টাকার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক হতে ৫০০ কোটি টাকা এর মত ঋণ নেয়া হয়েছে। এর একটি অংশ শোধ করার পর ঋণের এখন পরিমাণ আছে প্রায় ৩২৮ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদেরকে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য ছয় মাস সময় দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম উল্লেখ্য করে বলেছেন,

কোম্পানি গঠন করার আগে নির্দিষ্ট যে সময় দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে নগদকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
“তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিল। সেটা আমাদের নোটিশে আসার পর তাদেরকে পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট পরিমানে সময় দেয়া হয়েছে,” এ কথা বলছেন মি. ইসলাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মুখপাত্রের বক্তব্য হচ্ছে, “নগদ এখন যে পর্যায়ে অবস্থান করছে, সেখানে অন্যান্য ব্যক্তির অর্থের বিষয়ও আছে। সেজন্য কোম্পানি গঠনের আগে তাদেরকে ঋণ শোধ করে আসতে বলা হয়েছে।”

তবে ঋণের সঠিক পরিমাণ কত আছে – সেটা বলতে রাজি হয়নি নগদ এর কর্তৃপক্ষসমূহ।
নগদ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ তার বক্তব্যে বলেছেন,”আমরা লিমিটেড একটি কোম্পানি। একটা প্রাইভেট কোম্পানি যেভাবে লোন নেয়, সেভাবে লোন নিয়েছে এবং তা আমার পক্ষ হতে পরিশোধ হচ্ছে।
“এটা আমাদের জন্য একটি নিয়মিত বিষয় কিন্তু, এনিয়ে অনেক ধরনের গুজব ছাড়ানো হচ্ছে,” বলে তিনি একথাগুলো মন্তব্য করেছেন।

 

তিনি উল্লেখ করে আরো বলেছেন,

এনিয়ে কোম্পানি গঠনের মধ্যে কোন ধরনের জটিলতার কোন কিছু নেই।
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডাক অধিদপ্তর এর সাথে একটি চুক্তি করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য অনুমতি নিয়েছিল ২০১৭ সালে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠাটির সাথে ডাক বিভাগের মুনাফা ভাগাভাগি হয়েছে।

নগদ এর মালিকানা নিলেও ঋণের দায় নিবে না ডাক বিভাগ
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ

কিন্তু ডাক বিভাগের কোন ধরনের মালিকানা ছিল না। এই প্রতিষ্ঠানটি নগদ নামে বাজারে লেনদেন শুরু করে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের দিকে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের নাম পরিবর্তন করে থার্ড ওয়েভের পরিবর্তে নগদ নামকরন করা হয়।

শুরুতে নগদ এর মালিকানা এর দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের অনেকে এই কোম্পানিটি ছেড়ে দেয়ায় মালিকানার দায়িত্বে তখন আওয়ামী লীগের দুই জন সংসদ সদস্য যুক্ত হয়ে থাকেন।
কোম্পানী আইনে প্রাকটিস করেছেন, এমন একজন আইনজীবী ফাউজিয়া করিম মনে করে থাকেন, অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে সরকারি বিভাগ এর কোম্পানি গঠনের মত একটি গুরুত্ব ইস্যুতে সংসদের মধ্যে উত্থাপন করা উচিত ছিল।
এদিকে ডাক অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এখন প্রচলিত আইন সংশোধনের মাধ্যমে কোম্পানি গঠন করা যাবে নাকি নতুন করে আইন করতে হবে-এটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হবে।

তিনি আবার ঠিক দাবি করেছেন যে, ছয় মাসের মধ্যেই তারা নগদের মালিকানা নিয়ে কোম্পানি গঠনের জন্য সঠিকভাবে চেষ্টা তারা করছেন।

আরো জানুন :

উইকিপিডিয়া : নগত

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ